বুধবার ২১ মে ২০২৫

সম্পূর্ণ খবর

উত্তর সম্পাদকীয় | দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাক দ্বন্দ্বের প্রভাব কতটা? কী ভাবছে চীন, তাকিয়ে গোটা বিশ্ব

AD | ০৯ মে ২০২৫ ১৯ : ৩৩Abhijit Das


বুড়োশিব দাশগুপ্ত

পহেলগাঁওয়ে নৃশংস জঙ্গিহানার প্রত্যাঘাত 'অপারেশন সিঁদুর'। সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশসচিব স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, রাষ্ট্রপুঞ্জের জাতিসংঘের নির্ধারিত নিয়ম মেনেই ভারত পদক্ষেপ করেছে। ন'টি জায়গায় হামলা চালানোর উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসের উৎস নির্মূল করা। ওই ঘাঁটিগুলি থেকেই জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত সীমন্তের পারে হামলা চালানোর। তিনি আরও জানান, এর আগেও পাকিস্তানকে এই ঘাঁটিগুলি সম্পর্কে, সেগুলির কার্যকলাপ সম্পর্কে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনও পদক্ষেপ করেনি। উল্টে সেই 'তথ্য' ব্যবহার করে জঙ্গি কার্যকলাপে আরও উৎসাহ প্রদান করেছিল। সরকারি সূত্র অনুযায়ী, প্রত্যাঘাতে ২৬/১১ মুম্বই হামলার মূলচক্রী মাসুদ আজহারের গোটা পরিবার এবং নিকট আত্মীয়দের মৃত্যু হয়েছে।

বিদেশসচিব যদিও ভারতের প্রত্যাঘাতকে 'যুদ্ধ' হিসেবে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। রাষ্ট্রপুঞ্জ দুই দেশকে বার্তা পাঠিয়েছে, সংঘাত যেন কোনও ভাবে যুদ্ধে মোড় না নেয়। ইরান ইতিমধ্যেই মধ্যস্থতা করা প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু তুরস্ক ইতমধ্যেই পাকিস্তানকে সাহায্য করতে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে দিয়েছে। আমেরিকা এখনও কোনও পদক্ষেপ করেনি। কিন্তু পাকিস্তানকে বার্তা দেওয়া হয়েছ, যুদ্ধে আমেরিকার কোনও যুদ্ধবিমান যেন ব্যবহার না করা হয়। যদিও চীন অদ্ভুতভাবে গোটা বিষয়টি নিয়ে চুপ।

ভারতে ভয় যদিও পাকিস্তানকে নিয়ে নয় বরং 'বন্ধু'কে সাহায্যেj জন্য চীন কী করতে পারে তা নিয়ে। যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও তুলনাই চলে না। তা সে যতই যুদ্ধের হুমকি দিক না কেন। 'অপারেশন সিঁদুর' ন'টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেই শেষ হয়নি। এর পরের একটি সাংবাদিক বৈঠকে সেনার তরফ থেকে জানানো হয়, পাকিস্তান উত্তর ও পশ্চিম ভারতের শ্রীনগর, জম্মু, পাঠানকোট, অমৃতসর, লুধিয়ানা এবং চণ্ডীগড়-সহ বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও তীব্র করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভারতের 'ইন্টিগ্রেটেড কাউন্টার ইউএএস গ্রিড' এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্রুত তা প্রতিহত করে। পাকিস্তানের আক্রমণের পাল্টা ভারত লাহোরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে।

এখন মনে হচ্ছে পরিস্থিতি পুরোদস্তুর পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই যুদ্ধ কি প্রয়োজনীয় ছিল? রাশিয়া ও ইউক্রেন এবং ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে বিশ্ব ইতিমধ্যেই উদ্বিগ্ন। তৃতীয় আরও একটি যুদ্ধ সত্যিই উদ্বেগের বিষয় । বিশেষ করে যখন ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশি পারমাণু শক্তিধর। ভারত তার পাল্টা আক্রমণ বর্ণনা করার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক সংযম দেখাচ্ছে।  কিন্তু বাস্তবে, আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার মধ্যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং হত্যাকাণ্ড জড়িত। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে ভারতের দৈনিক খরচ হবে প্রায় ৬৭০ মিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের সামরিক শক্তি কম থাকায় তাদের প্রতিদিন প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে। এটা কি সত্যিই দরকার, যেখানে ভারত এবং পাকিস্তান উভয়েরই উন্নয়নকাজে আরও বেশি ব্যয় করা উচিত।

পুরোদস্তুর যুদ্ধ একবার শুরু হয়ে গেলে তা দ্রুত শেষ হবে না। সকলেরই ধারণা, ভারতের বিপুল সামরিক শক্তির সামনে বেশিদিন টিকতে পারবে না পাকিস্তান। কিন্তু সেই ধারণা ভুল। উদাহরণ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যেখানে রাশিয়া ভেবেছিল বিপুল সামরিক শক্তির সাহায্যে খুব সহজেই ইউক্রেনকে বাগে আনা যাবে। ইউরোপ এবং ন্যাটো ইউক্রেনকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় গত এক বছর ধরে যুদ্ধ চলে আসছে। পাকিস্তানকে ছোট করে দেখলে ভুল করা হবে। সে ঠিক বন্ধু খুঁজে পেয়ে যাবে। তুরস্ক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা 'ড্রাগন'-এর প্রবেশের অপেক্ষা করছি। জল কূটনীতি কিংবা বিশ্ব ব্যাঙ্ক বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডারকে বুঝিয়ে পাকিস্তানের অর্থ সাহায্য বন্ধ করতে রাজি করানো যুদ্ধের চেয়ে অনেক ভাল সমাধান হত। পাকিস্তানের অর্থনীতি ইতিমধ্যেই টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই 'প্রতিশোধের পদক্ষেপের' ফলে পাকিস্তানের হাল আরও খারাপ হয়ে যেত। ভারতের অর্থনীতি এখন ভাল অবস্থায় আছে। কিন্তু যুদ্ধের দৈনিক বিশাল ব্যয় অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি করতে পারে। আমরা কেবল আশা করতে পারি, শীঘ্রই সদিচ্ছা জাগবে এবং প্রতিবেশী দেশগুলি যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার উস্কাবি দেবে না। ১৯৪৭ সালে কাশ্মীর ইস্যুতে এই দু'টি দেশের জন্মের পর থেকে আমরা কমপক্ষে তিনটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ দেখে ফেলেছি।


India Pakistan ConflictOperation Sindoor

নানান খবর

সোশ্যাল মিডিয়া